আজকের ডিজিটাল যুগে Router হলো আমাদের ইন্টারনেট জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, Router সাইবার অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। Router থেকে তথ্য চুরি একটি গুরুতর সমস্যা, যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ফাইন্যান্সিয়াল ডেটা এবং অনলাইন নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা রাউটার থেকে তথ্য চুরির পদ্ধতি, এর সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং প্রতিরোধের উপায়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
১. Router থেকে কী ধরনের তথ্য চুরি হতে পারে?
রাউটার একটি নেটওয়ার্কের গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে, তাই এটি নিম্নলিখিত তথ্য ধারণ করে যা হ্যাকারদের টার্গেট হতে পারে:
- ব্যক্তিগত ডেটা: আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং হিস্ট্রি, লগইন ক্রেডেনশিয়াল (ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট)।
- ডিভাইসের তথ্য: রাউটারে সংযুক্ত সকল ডিভাইসের IP ও MAC অ্যাড্রেস।
- ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড: যদি রাউটার হ্যাক হয়, হ্যাকাররা আপনার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে অন্যান্য ডিভাইসেও আক্রমণ করতে পারে।
- সেনসিটিভ ফাইল: যদি কোনো ডিভাইস নেটওয়ার্ক শেয়ারিং চালু থাকে, হ্যাকাররা সেই ফাইলগুলো এক্সেস করতে পারে।
২. রাউটার থেকে তথ্য চুরির পদ্ধতি
হ্যাকাররা বিভিন্ন উপায়ে রাউটার থেকে তথ্য চুরি করতে পারে। কিছু সাধারণ পদ্ধতি হলো:
ক. ডিফল্ট লগইন ক্রেডেনশিয়াল ব্যবহার
অনেক ব্যবহারকারী রাউটারের ডিফল্ট ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড (যেমন- admin/admin) পরিবর্তন করে না। হ্যাকাররা এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে Router access করতে পারে।
খ. ফার্মওয়্যার এক্সপ্লয়েট
রাউটারের ফার্মওয়্যারে নিরাপত্তা ত্রুটি থাকলে হ্যাকাররা ম্যালিসিয়াস কোড ইনজেক্ট করে রাউটার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
গ. ম্যান-ইন-দ্য-মিডল (MITM) অ্যাটাক
হ্যাকাররা আপনার নেটওয়ার্ক ট্রাফিক ইন্টারসেপ্ট করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (যেমন- ব্যাংকিং ডিটেইলস, পাসওয়ার্ড) চুরি করতে পারে।
ঘ. DNS স্পুফিং
রাউটারের DNS সেটিংস পরিবর্তন করে হ্যাকাররা আপনাকে ফিশিং ওয়েবসাইটে রিডাইরেক্ট করতে পারে, যেখানে আপনার লগইন তথ্য চুরি হবে।
ঙ. ওয়াই-ফাই ক্র্যাকিং
দুর্বল এনক্রিপশন (যেমন- WEP) ব্যবহার করলে হ্যাকাররা WPA/WPA2 ক্র্যাকিং টুলস (যেমন- Aircrack-ng) ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড ব্রুট ফোর্স করতে পারে।
৩. রাউটার হ্যাকিংয়ের লক্ষণ
আপনার রাউটার হ্যাক হয়েছে কিনা তা বোঝার কিছু লক্ষণ:
- internet speed অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া।
- রাউটার সেটিংস নিজে থেকে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
- অপরিচিত ডিভাইস নেটওয়ার্কে কানেক্টেড দেখানো।
- ব্রাউজারে অপ্রত্যাশিত পপ-আপ বা রিডাইরেকশন।
৪. রাউটার থেকে তথ্য চুরি প্রতিরোধের উপায়
ক. রাউটার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন
- ডিফল্ট ক্রেডেনশিয়াল পরিবর্তন করে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন (অক্ষর, সংখ্যা ও সিম্বলের কম্বিনেশন)।
খ. ফার্মওয়্যার আপডেট রাখুন
- নিয়মিত রাউটার ম্যানুফ্যাকচারারের ওয়েবসাইট থেকে ফার্মওয়্যার আপডেট করুন।
গ. WPA3 এনক্রিপশন ব্যবহার করুন
- WEP বা WPA2 এর পরিবর্তে WPA3 সিকিউরিটি প্রোটোকল ব্যবহার করুন।
ঘ. রিমোট অ্যাক্সেস বন্ধ করুন
- অপ্রয়োজনে রাউটারের রিমোট ম্যানেজমেন্ট ফিচার বন্ধ রাখুন।
ঙ. ফায়ারওয়াল ও MAC ফিল্টারিং চালু করুন
- রাউটারে ফায়ারওয়াল চালু করুন এবং শুধুমাত্র পরিচিত ডিভাইসের MAC অ্যাড্রেস অ্যালাউ করুন।
চ. VPN ব্যবহার করুন
- একটি নির্ভরযোগ্য VPN ব্যবহার করে আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক এনক্রিপ্ট করুন।
৫. রাউটার হ্যাক হলে কী করবেন?
- রাউটার রিসেট করুন: ব্যাক প্যানেলের রিসেট বাটন চেপে ফ্যাক্টরি সেটিংসে ফিরিয়ে আনুন।
- পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: সব ডিভাইসের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
- অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যান করুন: নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ডিভাইসগুলো স্ক্যান করুন।
- ISP-কে জানান: আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারকে সম্ভাব্য হ্যাকিং সম্পর্কে জানান।
Router থেকে তথ্য চুরি একটি বড় ধরনের সাইবার হুমকি, তবে সচেতনতা ও সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত রাউটার মনিটরিং, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এবং আপ-টু-ডেট সিকিউরিটি প্রোটোকল ব্যবহার করে আপনি আপনার নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
Fake videos রুখতে বড় পদক্ষেপ নিলো YouTube