Space exploration নেতৃত্ব যাবে চীনের হাতে

Space exploration

Space exploration বা মহাকাশ অনুসন্ধান বর্তমান বিশ্বে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র। গত কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সিগুলো এই খাতে আধিপত্য বজায় রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন তার মহাকাশ কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে। প্রশ্ন উঠেছে—“Space exploration নেতৃত্ব কি চীনের হাতে চলে যাবে?”

এই প্রবন্ধে আমরা চীনের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস, বর্তমান অর্জন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

১. চীনের মহাকাশ কর্মসূচির ইতিহাস

চীনের মহাকাশ যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৬ সালে, যখন দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় মিসাইল ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করে।

প্রধান মাইলফলক:

  • ১৯৭০: চীন প্রথম স্যাটেলাইট “ডংফাং হং-১” উৎক্ষেপণ করে, এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে (জাপান ও ভারতের পর)।
  • ২০০৩: প্রথম চীনা নভোচারী ইয়াং লিওয়ে মহাকাশে গমন করেন, চীনকে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে মানববাহী মহাকাশযান প্রেরণের ক্ষমতা অর্জন করে।
  • ২০১৩: চন্দ্রপৃষ্ঠে “চ্যাং’ই-৩” মিশন সফলভাবে অবতরণ করে, যা চীনের প্রথম সফল মুন ল্যান্ডিং।
  • ২০১৯: “চ্যাং’ই-৪” মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে (ফার সাইড) অবতরণ করে।
  • ২০২০: “চ্যাং’ই-৫” মিশন চাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

এই অর্জনগুলো চীনের ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রমাণ করে।

২. চীনের বর্তমান মহাকাশ অর্জন

চীন বর্তমানে মহাকাশ গবেষণায় নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের প্রধান প্রকল্পগুলো হলো:

ক. টিয়ানগং স্পেস স্টেশন

চীন ২০২২ সালে “টিয়ানগং” স্পেস স্টেশনের নির্মাণ সম্পন্ন করে, যা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের (ISS) বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এটি চীনের স্বাধীন মহাকাশ গবেষণার ক্ষমতা প্রমাণ করে, বিশেষত যখন NASA চীনের সাথে সহযোগিতা থেকে বিরত রয়েছে।

খ. চন্দ্র ও মঙ্গল অভিযান

  • চন্দ্র মিশন: চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে মানববাহী মিশন প্রেরণের পরিকল্পনা করছে।
  • মঙ্গল মিশন: “তিয়ানওয়েন-১” ২০২১ সালে মঙ্গলে সফলভাবে অবতরণ করে, চীনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে মঙ্গলে রোভার স্থাপনের ক্ষমতা প্রদর্শন করে।

গ. বেইদু নেভিগেশন সিস্টেম

জিপিএস-এর বিকল্প হিসেবে চীন “বেইদু” স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম চালু করেছে, যা সামরিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা বৃদ্ধি করেছে।

৩. Space exploration চীনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

চীনের মহাকাশ পরিকল্পনা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী:

ক. স্থায়ী চন্দ্র বেস (Moon Base)

চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে একটি স্থায়ী গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে, যা ভবিষ্যতে মঙ্গল অভিযানের জন্য একটি স্টপিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।

খ. মঙ্গল থেকে নমুনা সংগ্রহ

২০৩০ সালের মধ্যে চীন মঙ্গল থেকে মাটি ও পাথরের নমুনা পৃথিবীতে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা বিজ্ঞানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।

গ. আন্তঃগ্রহ অভিযান

চীন জুপিটার ও এর উপগ্রহগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য মিশন প্রেরণের পরিকল্পনা করছে, যা তাদেরকে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

৪. চীনের নেতৃত্বের সম্ভাব্য কারণ

ক. সরকারের পূর্ণ সমর্থন

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মহাকাশ কর্মসূচিকে জাতীয় গৌরবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে এবং এতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।

খ. প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে, যেমন—লং মার্চ রকেট সিরিজ

গ. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

চীনের “২০৫০ মহাকাশ সুপারপাওয়ার” লক্ষ্য তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে বড় প্রকল্পে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

৫. চ্যালেঞ্জ ও প্রতিযোগিতা

যদিও চীন দ্রুত উন্নতি করছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  • যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতা: NASA-এর আর্টেমিস প্রোগ্রাম (চাঁদে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা) এবং স্পেসএক্স-এর মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো চীনের জন্য বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।
  • আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা: চীন ISS থেকে বাদ পড়ায় তাদেরকে এককভাবে কাজ করতে হচ্ছে।
  • প্রযুক্তিগত ঝুঁকি: মহাকাশ মিশনে ব্যর্থতার সম্ভাবনা সর্বদা থাকে, যেমন লং মার্চ-৫B রকেটের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে বিতর্ক

৬. বৈশ্বিক প্রভাব

চীনের উত্থান মহাকাশ গবেষণায় নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে:

  • মার্কিন-চীন মহাকাশ প্রতিযোগিতা ঠান্ডা যুদ্ধের মতো নতুন স্পেস রেসের সূচনা করতে পারে।
  • অন্যান্য দেশগুলোর সাথে জোট: চীন রাশিয়া, পাকিস্তান ও আফ্রিকার কিছু দেশের সাথে মহাকাশ সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
  • বাণিজ্যিক সুযোগ: চীনের সাফল্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে মহাকাশ বাণিজ্যে উৎসাহিত করতে পারে।

চীন নিঃসন্দেহে Space exploration-এ একটি প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছে। তবে নেতৃত্বের জন্য তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও বেসরকারি স্পেস কোম্পানিগুলোর সাথে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। চীনের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে তাদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং ভবিষ্যৎ মিশনের সফলতার উপর।

একটি বিষয় স্পষ্ট—Space exploration-এ চীনের ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে, এবং আগামী দশকগুলোতে এটি বৈশ্বিক মহাকাশ নীতিকে নতুনভাবে রূপ দিতে পারে।

আরও পড়ুন:

Smartphone addiction কমাতে সাহায্য করবে অ্যাপ

Gaming laptop ব্যবহারের সুবিধা

Mobile phone ব্যবহারের সতর্কতা

ফোনে Advertising messages বন্ধ করা যাবে সহজেই

One thought on “Space exploration নেতৃত্ব যাবে চীনের হাতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *