ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে Mass Censorship নেপথ্যে ইসরাইল?

Mass Censorship

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক Mass Censorship অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের প্রসঙ্গে, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষের কণ্ঠস্বর দমন করা হচ্ছে বলে অনেকেই দাবি করছেন। বিভিন্ন গবেষণা ও সাংবাদিক তদন্তে উঠে এসেছে যে, ইসরাইলের সরকার ও লবি গ্রুপগুলোর চাপে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ফিলিস্তিনি সমর্থক কন্টেন্ট অপসারণ বা সীমাবদ্ধ করে চলেছে। এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব:

  1. সামাজিক মাধ্যম ও সেন্সরশিপের প্রেক্ষাপট
  2. ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের ভূমিকা
  3. ইসরাইলি সরকার ও লবি গ্রুপগুলোর প্রভাব
  4. সেন্সরশিপের প্রমাণ ও ঘটনাসমূহ
  5. বিশ্লেষণ: কেন এই সেন্সরশিপ?
  6. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
  7. উপসংহার: ব্যবহারকারীদের করণীয়

১. সামাজিক মাধ্যম ও সেন্সরশিপের প্রেক্ষাপট

সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার (এক্স) বিশ্বব্যাপী তথ্য আদান-প্রদানের প্রধান মাধ্যম। তবে, এই প্ল্যাটফর্মগুলো নানা সময়ে সরকারি চাপ, আইনি হুমকি বা কর্পোরেট স্বার্থে নির্দিষ্ট কন্টেন্ট সেন্সর করে থাকে।

  • সেন্সরশিপের ধরন:
    • পোস্ট/ভিডিও অপসারণ
    • অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয়করণ
    • অ্যালগরিদমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয় কম দেখা দেওয়া (শ্যাডো ব্যান)
  • ফিলিস্তিনি ইস্যুতে সেন্সরশিপ:
    ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কথা বলা এক্টিভিস্ট, সাংবাদিক ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের পোস্ট বারবার ডিলিট বা লিমিট করা হয়েছে।

২. ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের ভূমিকা

মেটা (ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মালিক) দাবি করে যে তারা “নিরপেক্ষ নীতি” অনুসরণ করে। কিন্তু বাস্তবে:

  • ২০২১ সালের গাজা যুদ্ধের সময়:
    ফিলিস্তিনিদের পোস্ট, বিশেষ করে ইসরাইলি বাহিনীর হামলার ভিডিও, ব্যাপকভাবে অপসারণ করা হয়েছিল।
    • উদাহরণ: আল-জাজিরা ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লাইভ ভিডিও ব্লক করা হয়েছিল।
  • হ্যাশট্যাগ সেন্সরশিপ:
    #FreePalestine, #GazaUnderAttack-এর মতো হ্যাশট্যাগগুলো ইনস্টাগ্রামে লিমিটেড রিচ পেয়েছে।
  • অ্যাকাউন্ট সাসপেনশন:
    ফিলিস্তিনি এক্টিভিস্ট ও সংগঠনগুলোর অ্যাকাউন্ট বারবার বন্ধ করা হয়েছে।

৩. ইসরাইলি সরকার ও লবি গ্রুপগুলোর প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, ইসরাইল সরাসরি মেটার ওপর চাপ প্রয়োগ করে ফিলিস্তিন-বিরোধী নীতি প্রণয়নে:

  • ইসরাইলি সরকারের চাপ:
    • ২০১৬ সালে, ইসরাইলি মন্ত্রী গিলাদ এরদান মেটার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেখানে ফেসবুক ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট করা কন্টেন্ট দ্রুত অপসারণ করতে সম্মত হয়।
    • ইসরাইলি কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে ফেসবুককে ফিলিস্তিনি “সন্ত্রাসী” কন্টেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে রিপোর্ট করেন।
  • লবি গ্রুপ:
    • ADL (Anti-Defamation League) এবং Israel Advocacy Movement-এর মতো সংগঠনগুলো ফেসবুককে চাপ দেয় ফিলিস্তিনি কন্টেন্ট সেন্সর করতে।
    • এই গ্রুপগুলো “ইহুদি-বিরোধী” বলে ফিলিস্তিনি সমর্থক পোস্টকে ট্যাগ করে।

৪. Mass Censorship প্রমাণ ও ঘটনাসমূহ

  • ২০২১ সালের একটি গবেষণা (Human Rights Watch):
    ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ৫০টিরও বেশি ফিলিস্তিনি পোস্ট ভুলভাবে অপসারণ করেছিল।
  • মেটার অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্ট (২০২২, The Intercept):
    মেটার কর্মীরা স্বীকার করেছেন যে ইসরাইলি চাপে তারা ফিলিস্তিনি কন্টেন্ট সেন্সর করে।
  • ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা:
    মোহাম্মদ এল-খালদি (Al Jazeera) এবং মোতাজ আযযা (AFP)-এর মতো সাংবাদিকদের পোস্ট বারবার ডিলিট হয়েছে।

৫. বিশ্লেষণ: কেন এই সেন্সরশিপ?

  • রাজনৈতিক চাপ:
    ইসরাইল চায় ফিলিস্তিনি সংঘাতের নেতিবাচক ছবি বিশ্বদরবারে না উঠুক।
  • মার্কিন সমর্থন:
    যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মেটার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে, এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
  • অর্থনৈতিক স্বার্থ:
    ইসরাইলি টেক কোম্পানিগুলোর সাথে মেটার বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন:

Smartphone DSLR মতো ছবি তুলতে সহায়ক ৫ অ্যাপ

Phone storage খালি করার ১০টি সহজ উপায়

দেশের প্রথম Ocean satellite গ্রাউন্ড স্টেশন

চালের চেয়েও ছোট Pacemaker হার্টের জন্য বিপ্লব

৬. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

  • UN ও Amnesty International:
    ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের সেন্সরশিপকে “মুক্ত মত প্রকাশের উপর হুমকি” বলে অভিহিত করেছে।
  • বিক্ষোভ:
    #StopSilencingPalestine ক্যাম্পেইন বিশ্বজুড়ে ট্রেন্ড করেছিল।

ব্যবহারকারীদের করণীয়

  • বিকল্প প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার:
    টেলিগ্রাম, ম্যাস্টোডন, ট্রুথ সোশালের মতো প্ল্যাটফর্মে সেন্সরশিপ কম।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি:
    মেটার সেন্সরশিপ নিয়ে মিডিয়া ও এক্টিভিস্টদের চাপ তৈরি করতে হবে।
  • আইনি লড়াই:
    ফেসবুকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের সেন্সরশিপ শুধু ফিলিস্তিনি ইস্যুতেই নয়, বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাক্স্বাধীনতার জন্য হুমকি। এই বিষয়ে সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।

One thought on “ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে Mass Censorship নেপথ্যে ইসরাইল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *