কিভাবে বাংলাদেশে Cryptocurrency কিনবেন

Cryptocurrency

Cryptocurrency হলো ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা, যা ক্রিপ্টোগ্রাফি (গাণিতিক এনক্রিপশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে সুরক্ষিত এবং বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কে পরিচালিত হয়। এটি কোনো সরকার বা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। বিটকয়েন (Bitcoin) হলো প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় Cryptocurrency, তবে ইথেরিয়াম (Ethereum), রিপল (Ripple), লাইটকয়েন (Litecoin) এবং হাজারো অন্যান্য Cryptocurrency রয়েছে।

বাংলাদেশে Cryptocurrency অবস্থান:

  1. আইনি অবস্থা:
    • বাংলাদেশ ব্যাংক (বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) ক্রিপ্টোকারেন্সিকে অননুমোদিত এবং অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায় যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে বৈধ মুদ্রা নয় এবং এটি ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
    • বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা, বিক্রি করা বা লেনদেন করা আইনত নিষিদ্ধ
  2. শাস্তির বিধান:
    • ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে জড়িত থাকলে বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ এর অধীনে শাস্তির বিধান রয়েছে।
    • ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের জন্য সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
  3. ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা:
    • বাংলাদেশ ব্যাংক স্থানীয় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সাথে জড়িত হতে নিষেধ করেছে। কোনো ব্যাংক যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশে Cryptocurrency জনপ্রিয়তা:

যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে আইনত নিষিদ্ধ, তবুও অনেকেই এটি ব্যবহার করেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং প্রযুক্তি-সচেতন ব্যক্তিরা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এর প্রধান কারণগুলো হলো:

  1. উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা: ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চ মুনাফার সুযোগ তৈরি করে।
  2. বৈশ্বিক প্রবণতা: বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলেছে।
  3. ডিজিটালাইজেশন: ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের প্রসারের কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।

বাংলাদেশে Cryptocurrency ব্যবহারের পদ্ধতি:

যদিও আইনত নিষিদ্ধ, তবুও কিছু মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করেন। সাধারণত নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়:

  1. আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার:
    • Binance, Coinbase, Kraken ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচা করা হয়।
    • বাংলাদেশি টাকা দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার বা পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
  2. পিয়ারটুপিয়ার (P2P) লেনদেন:
    • LocalBitcoins, Paxful ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে সরাসরি অন্য ব্যক্তির সাথে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচা করা যায়।
  3. ক্রিপ্টো ওয়ালেট ব্যবহার:
    • ক্রিপ্টোকারেন্সি সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করা হয়। যেমন: Trust Wallet, MetaMask ইত্যাদি।

বাংলাদেশে Cryptocurrency ঝুঁকি:

  1. আইনি ঝুঁকি:
    • ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন আইনত নিষিদ্ধ, তাই এর সাথে জড়িত থাকলে শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
  2. সুরক্ষা ঝুঁকি:
    • ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হ্যাকিং, স্ক্যাম এবং ফিশিং আক্রমণের শিকার হতে পারে।
  3. মার্কেট অস্থিরতা:
    • ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম দ্রুত ওঠানামা করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।
  4. ফ্রড এবং স্ক্যাম:
    • অনলাইনে অনেক প্রতারক ক্রিপ্টোকারেন্সির নামে ফ্রড করে থাকে।

বাংলাদেশে Cryptocurrency ভবিষ্যৎ:

বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও, বিশ্বব্যাপী এর জনপ্রিয়তা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও এর আইনি অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে গবেষণা করছে এবং সম্ভাব্য নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি আইনত নিষিদ্ধ এবং এর ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে, অনেকেই এটি ব্যবহার করেন এবং এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার আগে আইনি ঝুঁকি, সুরক্ষা ঝুঁকি এবং মার্কেট অস্থিরতা সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির আইনি অবস্থান পরিবর্তন হলে এটি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

আরও পড়ুন:

Stock Market খোলার আগে ৫টি জিনিস জানা উচিত

Mobile Banking এর সুবিধা এবং অসুবিধা

নতুন Smartphone কিনবেন? যাচাই করুন সেটি আসলে নতুন কিনা!

বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় এবং বিক্রয় একটি জনপ্রিয় এবং দ্রুত বর্ধনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং এটিকে অননুমোদিত বলে ঘোষণা করেছে। এর অর্থ হলো, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সাথে জড়িত ঝুঁকি এবং আইনি জটিলতা রয়েছে। তারপরও, অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

Cryptocurrency কেনার ধাপগুলো:

১. Cryptocurrency সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন:

  • Cryptocurrency কী, কীভাবে কাজ করে এবং এর ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।
  • বিটকয়েন (Bitcoin), ইথেরিয়াম (Ethereum), বিনান্স কয়েন (Binance Coin) ইত্যাদি জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো সম্পর্কে গবেষণা করুন।

২. একটি ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন:

  • বাংলাদেশ থেকে আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলো:
    • Binance
    • Coinbase
    • Kraken
    • Paxful
    • LocalBitcoins
  • প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনের সময় সুরক্ষা, ফি, ব্যবহারের সহজতা এবং সমর্থনকারী ক্রিপ্টোকারেন্সির ধরন বিবেচনা করুন।

৩. অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং ভেরিফিকেশন:

  • নির্বাচিত প্ল্যাটফর্মে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
  • সাধারণত ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যায়।
  • অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার পরিচয়পত্র (পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র) এবং ঠিকানার প্রমাণ জমা দিতে হতে পারে।

৪. পেমেন্ট মেথড সেট আপ:

  • ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য পেমেন্ট মেথড সেট আপ করুন। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা যায়:
    • ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড: ভিসা বা মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে পারেন।
    • ব্যাংক ট্রান্সফার: কিছু প্ল্যাটফর্ম সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার সমর্থন করে।
    • মোবাইল পেমেন্ট: বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি মোবাইল পেমেন্ট সেবা ব্যবহার করা যায়।
    • পিয়ারটুপিয়ার (P2P): LocalBitcoins বা Paxful এর মতো প্ল্যাটফর্মে P2P ট্রেড করা যায়।

৫. ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয়:

  • আপনার অ্যাকাউন্টে ফান্ড যোগ করার পর, পছন্দের ক্রিপ্টোকারেন্সি নির্বাচন করুন এবং অর্ডার প্লেস করুন।
  • মার্কেট অর্ডার বা লিমিট অর্ডার ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে পারেন।

৬. ক্রিপ্টোকারেন্সি স্টোর করা:

  • ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার পর এটিকে নিরাপদে সংরক্ষণ করুন। দুটি প্রধান উপায় হলো:
    • হট ওয়ালেট: এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মের ওয়ালেটে সংরক্ষণ করা। এটি সহজ কিন্তু কম নিরাপদ।
    • কোল্ড ওয়ালেট: হার্ডওয়্যার ওয়ালেট বা পেপার ওয়ালেটে সংরক্ষণ করা। এটি বেশি নিরাপদ।

বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার সময় সতর্কতা:

  1. আইনি ঝুঁকি:
    1. বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সাথে জড়িত আইনি ঝুঁকি রয়েছে।
  2. সুরক্ষা ঝুঁকি:
    1. ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হ্যাকিং এবং স্ক্যামের শিকার হতে পারে। তাই বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন এবং দুই-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) সক্ষম করুন।
  3. মার্কেট অস্থিরতা:
    1. ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম দ্রুত ওঠানামা করে। তাই বিনিয়োগের আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করুন।
  4. ফি এবং এক্সচেঞ্জ রেট:
    1. ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার সময় ট্রানজেকশন ফি, এক্সচেঞ্জ রেট এবং হিডেন চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
  5. স্ক্যাম এড়ানো:
    1. অনলাইনে অনেক স্ক্যামার ক্রিপ্টোকারেন্সির নামে প্রতারণা করে। তাই বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় করুন।

বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ:

যদিও বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনও অননুমোদিত, তবে বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও এর আইনি অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে গবেষণা করছে এবং সম্ভাব্য নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা সম্ভব, তবে এটি কিছু ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জের সাথে জড়িত। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন, বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন এবং আইনি ও সুরক্ষা ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, তাই শুধুমাত্র সেই পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করুন যা আপনি হারাতে পারবেন।

Dhaka Stock Exchange বিনিয়োগের ভূমিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *